
কিছু তুচ্ছ কারণ যা আপনাকে স্কীলড করতে পারেনি, ফলাফল সারাজীবনের কান্না
দেশের রাজনৈতিক এ পরিস্থিতি সকল ব্যবসার অবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেজন্য প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বেকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিল এই অবস্থা। এ মুহুর্তে যারা অনলাইনে বসে আয় করছে, তাদের আয়ে কোন ধরনের প্রভাব পড়েনি। এরকম পরিস্থিতিতেও যদি অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে সবাই সচেতন না হয়, তাহলে এ জাতির দূর্ভাগ্যের জন্য নিজেরাই দায়ি।
আমরা যারা একটা পযায়ে এসেছি, তারা সবসময় সবার জন্যই কিছু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাই সেটা অবজ্ঞা করার পর বহুদিন পর যখন উপলব্ধি হয়ে তাদের দারিদ্রতার জন্য কষ্ট পায়, তখন আসলে করুণা দেখানো ছাড়া কিছু করার থাকেনা।

সবাইকে আবারও জানাই, ক্যারিয়ার গঠন কিংবা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলেই হয়ে যায়না। যারা যারা সফল তাদের গল্প এবং আমার নিজের গল্পটাও কিন্তু অনেক সেক্রিফাইস, অনেক কষ্ট, অনেক পরিশ্রম দিয়েই ভরা। যারা আমাদের আজকের এ অবস্থানের জন্য লোভ করেন, কিংবা আফসোস করেন, তাদের জন্য আবারো পরামর্শ, আমাদের এ অবস্থানকে লোভ না করে, আমরা যা সেক্রেফাইস করেছি, যা পরিশ্রম করেছি, সেটিকে লোভ করুন। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই বড় কিছু উপহার দিবেন।
আপনার সেক্রেফাইস, কিংবা কস্টের গল্পটা হয়ত হবে ২-৩ বছরের কিন্তু সফলতার কিংবা সুখের গল্পটা হবে অনেক দীর্ঘ। ৫০ বছরের সুখের গল্পটা লিখতে প্রচুর পৃষ্ঠা ব্যয় করতে হবে। অবহেলাতে এ সময়টাকে, এ সুযোগগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েননা। আপনাদের প্রত্যেকের ভিতরেই রয়েছে , ঘুমন্ত সিংহ। সেই সিংহকে আদর করে গভীর ঘুমে ডুবিয়ে দিবেননা. দয়া করে। সিংহকে এখনই জাগিয়ে তুলুন। যখন এ সিংহ ঘুম থেকে উঠে তেজ হারিয়ে ফেলবে, তখন ঘুম থেকে জাগিয়ে লাভ হবেনা। তখন শুধু আফসোসটাই করতে হবে। বিশ্বাস করুন, আপনার চাকুরি নাই, আয় নাই, বেকার, এ ধরনের কষ্টের কথাগুলো শুনে তখন জিহবা দিয়ে চুক চুক শব্দ করে হয়ত আফসোস করবে কিংবা আফসোস করার অভিনয় করবে অনেকে। কিন্তু সেটুকুতেই শেষ। কিছুই করবেনা আপনার জন্য। কারন এরকম দারিদ্রতার অভিশাপের গল্পগুলো যে প্রতিনিয়ত তাদের প্রচুর পরিমাণে শুনতে হয়। সুতরাং এতজনেরটা শোনার পর আপনারটাকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। আর তখন আসলেই কিছু করারও থাকেনা। কারণ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি নিজেকে স্কীলড করতে পারেননি।
অনেক কারনেই হয়ত, নিজেকে স্কীলড করতে পারেননি।
– বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা ঘুরাঘুরি করাটাই আপনার জন্য তরুন বয়সের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে হয়েছে।
– সময়ের মূল্য নিয়ে রচনা মুখস্থ করেছেন, পরীক্ষার খাতাটা ভালভাবে লিখে ভাল নাম্বারও পেয়েছেন। কিন্তু নিজের জীবনের ক্ষেত্রেই এ মুখস্থ বিদ্যাটা কাজে লাগাতে পারেননি। আর সেজন্য সব কাজের ফাকে ২৪ঘন্টার মধ্যে মাত্র ২ঘন্টা বের করতে পারিনি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য।
– আপনি নিজের জীবনের স্থায়ীত্ব ভেবেছেন ২বছরের। ভাবেননি, ৫-১০ বছর পরের জীবনের ব্যাপারে।
– বাবার টাকা দিয়ে কিংবা বন্ধুর টাকা দিয়ে সারাজীবন আপনাকে কেউ চালাবেনা, সেই বিষয়টি আপনার মাথা থেকে পুরোই হারিয়ে গিয়েছিল।
– ঘুমটাকে সবচাইতে আরামদায়ক কাজ হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন, যা আপনার ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্নকেও ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে, সেটি মাথাতে ছিলনা।
– ভার্সিটিতে পরীক্ষা থাকলেও বন্ধুর জন্মদিনে গিয়ে মজার খাবার খাওয়াটাকে কিংবা মজার মূহুর্ত কাটানোকে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে হলেও, ৫-১০ বছরের মজার খাবার খাওয়ার কিংবা মজার মূহুর্ত কাটানোর ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছিলেন। আর সেজন্য বন্ধুর জন্মদিনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা কিংবা ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি না করলেও নিজের ক্যারিয়ারের জন্য কিছু শিখতে সময় ব্যয় করাটার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো অনেক বড় বাধা ছিল।
– যুবক বয়সের এত অ্যানার্জির মধ্যেও পরিশ্রম করাটাকে আপনার কাছে অনেক কষ্ট সাধ্যের বিষয়। হবেইতো, কারণ আপনার মাথাতে নাই, আজ থেকে ১০ বছর পর যখন শরীর অনেক দুর্বল থাকবে, তখনও আপনি শুয়ে থাকতে পারবেননা। আজকের সময়টাকে অবজ্ঞা করার কারণেই তখনকার ফলাফলটা কি হতে পারে, সেটি বুঝতে অনেকের নিজেদের বাবা-মার দিকে তাকালেই বুঝা যায়।
– টিভি পর্দাতে কিংবা ল্যাপটপে বসে কিংবা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে সেখানের নায়কদের সাথে নায়িকার সুন্দর চেহার দেখে তাদের নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডাটে আফসোস করছি, নিজেরও এরকম নায়িকার মত সুন্দর একটি গার্ল ফ্রেন্ডের ব্যাপারে। কিন্তু গার্ল ফ্রেন্ড এরকম পাওয়া গেলেও বউ এতসুন্দর পেতে হলে নিজেকে যে সেই সুন্দরী মেয়ের অনেক বর প্রার্থীদের কাছে যোগ্যতা প্রমাণে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে, সেটি ভুলে গেছেন।
– বন্ধুর জন্মদিন কিংবা বিয়ে উপলক্ষে ৫০০০টাকা খরচ করেও অনেক কম খরচ করেছেন ভেবে মনে কষ্ট নিয়ে কয়েকটি দিন নষ্ট করলেও একটু খরচ করে কিছু শিখে নিজেকে দক্ষ করার ক্ষেত্রে এ টাকাটাই আপনার কাছে অনেক বেশি মনে হচ্ছে। আবার ভাল একটি ড্রেসের জন্য খরচ একটু বেশি করতে আপত্তি না থাকলেও সারা জীবনের জন্য যা কাজে লাগবে, সেটির জন্য সবচাইতে সস্তা জায়গাটাতেই যাওয়াটাকে নিজের সবচাইতে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করছেন। সেই ক্ষেত্রে ভাল প্রোডাক্ট কিনতে বেশি খরচ হয়, এ সূত্রটি আপনার মাথা থেকে হারিয়ে গেছে।

সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কঠিন বর্তমান পার করার প্রস্তুত নিন। বর্তমানের এ যুগে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার জন্য বুয়েট কিংবা মেডিকেলে পড়া লেখা করতে হয়না। সিভিনটেকে কোর্স করে গেছে এরকম অনেক স্টুডেন্ট দেখাতে পারব, যারা মাত্র অনার্স ২য় বর্ষে পড়েও বর্তমানে মাসে আয় করছে গড়ে ৫০,০০০টাকা কিংবা আরো বেশি। সবাইকে বিষয়গুলো জানানোর জন্য কয়েকমাস যাবৎ জেনেসিসব্লগসে সেই সব সাক্ষাৎকারগুলোও প্রকাশ করেছি। তারা যদি এ বয়সে এরকম আয় করে, ভাবুনতো একবার, আমাদের বাবা-মা র বয়স হতে হতে তাদের আয়ের পরিমাণটা কোন পযায়ে যেতে পারে। এতজন যদি এ বয়সে এ পযায়ে যেতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেননা? কেন পারবেননা, সেটিতো উপরে উল্লেখ করলামই। আজ থেকে শুরু করুন, উপরে উল্লেখ করা স্কীলড না হওয়ার কারণগুলোর বিরুদ্ধে জীবন মরণ যুদ্ধ।