
ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে সিরিজ পোস্ট (পর্ব:২) (ট্রেনিং সেন্টারের মার্কেটিংয়ের কেস স্টাডি)
এ পর্বটি স্পন্সর করেছে, চাঁদপুরের ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার, সিইসি ল্যাব
শুধুমাত্র কিছু সোশ্যাল মিডিয়াতে লিংক শেয়ার করলে কিংবা ফেসবুক পেজে বিশাল লাইক বাড়ালেই মার্কেটার হওয়া যায়না। দিন শেষে সেই পেজ থেকে কতটা সেল পেলাম সেটাই একজন মার্কেটারের প্রধান কাজ।
যদিও অনেকেই মার্কেটিংয়ের ভুল কিছু দক্ষতা নিয়ে নিজেকে মার্কেটার হিসেবে প্রচার করে।
ভুল দক্ষতাগুলো:
– ফেসবুক পেজের লাইক বৃদ্ধি করা।
– বিভিন্ন গ্রুপে লিংক শেয়ার করা।
লাইভ প্রজেক্টের গল্প দিয়ে শিখালেই আশা করছি মার্কেটিংয়ের গভীরতা বুঝা সম্ভব হবে।
চাঁদপুরের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক ট্রেনিং সেন্টার সিইসি ল্যাব আমার কাছ থেকে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এবং মার্কেটিং সম্পর্কিত কনসালটেন্সি সেবা নিচ্ছে। সেই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার কিছু সাজেশন শেয়ার করছি। তাহলেই অনেক কিছু শিখতে পারবেন্
একদিন রাতে চাঁদপুরের মানুষ আছে এরকম ৩টা গ্রুপে একই সাথে কুইজ টাইপ একটি পোস্ট শেয়ার করি। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের এবং তাদের ব্রান্ডিং ভ্যালুটা বোঝার জন্য, সহজ কথাতে বাজারে তাদের ব্রান্ডের ভ্যালুটা বোঝার জন্য।
সেই ফলাফলটাকে কেইস স্ট্যাডি হিসেবে ধরি, তাহলে বুঝতে সবার সহজ হবে:
ফলাফল ছিলো এরকম:
– অন্য গ্রুপটি চাঁদপুরের গ্রুপ না হলেও সেখানে চাঁদপুরের মানুষরা কমেন্টে উত্তর দিয়েছে। কিন্তু সিইসি ল্যাবের গ্রুপে কেউ উত্তর দেয়নি।
– এমন কি সেই পেজের অ্যাডমিনের রুমমেট ব্যক্তিটিও অফিসিয়াল পেজটিতে কোন কমেন্ট না করলেও অন্য গ্রুপটিতে কমেন্ট করেছে।
এ অবজারভেশনটি মার্কেটিংয়ের পরবর্তী পরিকল্পনার জন্য খুব জরুরী। আসুন দেখে নেই সেই ফলাফল হতে কি শিখতে পেলাম:
– মার্কেটিং করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ব্রান্ডিং স্কোর পুরো জিরো। আর তাই অন্য মানুষরা গ্রুপে অ্যানগেজ হওয়াতো দূরের কথা, নিজের কাছের মানুষটিও গ্রুপে অ্যানগেজ না।
– ব্রান্ডিং স্কোর জিরো হওয়ার কারনে ইনবক্সেও কোন মেসেজ আসছেনা।
– গ্রুপের ব্রান্ডিং স্কোর জিরো হওয়ার কারনে সেলও পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। (যদিও সেল পাচ্ছে, তবে সেটি অবশ্যই একদম নিজের কাছের লোক)
সেল পাওয়ার স্টেপগুলো আসুন দেখে নেই:
১) প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি পরিধি বাড়ানো।
২) ট্রাস্ট অর্জন।
৩) আস্থা তৈরি করা।
৪) কনভার্সন শুরু।
৫) সেল শুরু।
আস্থার লেভেল তৈরি হয়েছে মানে ব্রান্ডিং স্কোর বেড়েছে আর তখনই কনর্ভাসন শুরু হয়। আর কনর্ভাসন শুরু হওয়ার পরই আশা করতে পারেন, এখন সেলে কনর্ভাট হবে। এর আগ পযন্ত সেল পাওয়ার স্বপ্ন দেখে লাভ নাই।
তাহলে সেই পেজ এখনও ২নং ধাপটিতেও একদম নিন্ম স্কোর পেয়ে আছে। আর সেজন্যই তার খুব কাছে মানুষটিও তার পেজে একই কনটেন্টে কোন ধরনের কমেন্ট না করলেও অন্য গ্রুপটিতে গিয়ে ঠিকই কমেন্ট করেছে।
অফিসিয়াল ফেসবুক পেজটির স্বাস্থ্য বুঝার জন্য লাইক নয়, কি কি সূচক লক্ষ্য রাখতে হবে মনে রাখুন:
– পেজের পোস্টে অ্যানগেজমেন্টের পরিমান দেখে।
– ইনবক্সে মেসেজের পরিমান দেখে।
– সার্ভিস সম্পর্কে কোন ধরনের ইনকোয়েরি দেখে।
– পেজের পোস্টের কমেন্টে অন্যকে ট্যাগ করার প্রবনতা দেখে।
– পেজের পোস্টের শেয়ার করার পরিমান।
– পেজের ইনসাইট দেখে।
তাহলে যে অবস্থাতে আছে, সেই অবস্থাতে পরামর্শ কি?
নিয়মিত এবং প্রচুর পরিমানে পেজে পোস্ট করা।
পোস্ট সংক্রান্ত পরামর্শ:
– প্রতিদিন ৩বেলা পেজে পোস্ট করা।
– অ্যাংগেজিং টাইপ পোস্ট করা।
– কনটেন্ট পোস্টের সময় কনটেন্ট টাইপে ভ্যারিয়েশন আনা।
– বাণিজ্যিক পোস্টের পরিবর্তে শিক্ষনীয় পোস্ট করা
– ইমেজ পোস্ট আর ভিডিও পোস্ট বেশি করা।
– প্রতিটা পোস্টেই নিজেদের ব্রান্ডিংটার বিষয়ে লক্ষ্য রাখা।
কনটেন্টের ভ্যারিয়েশন:
– লিখা পোস্ট, ইমেজ, ভিডিও পোস্ট।
– টিপস পোস্ট
– কোটেশন পোস্ট
– ইমেজ সিরিজ।
– সফলদের গল্প
– প্রতিষ্ঠান হতে সফলতা পাওয়াদের ফিডব্যাক
– ব্লগের লিংক পোস্ট।
– কুইজ পোস্ট।
পোস্ট প্রচারের ক্ষেত্রে পরামর্শ:
ফেসবুক মার্কেটিং বর্তমানে পেইড ছাড়া ফলাফল পাওয়া খুব কষ্টকর। কিন্তু যেহেতু চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ পেইড পোস্টের বাজেট দিতে কম আগ্রহী। তাই তাদের জন্য আমার পরামর্শগুলো নিচের মত ছিলো:
– প্রতিদিনের পোস্ট কমপক্ষে ২০০টি শেয়ার করা।
– কমপক্ষে ৫০জনের ওয়্যালে পোস্টটি শেয়ার করার উদ্যোগ নেওয়া।
– প্রত্যেক পোস্টে লোকাল ১০০জনকে ট্যাগ করার ব্যবস্থা করা।
– প্রত্যেক পোস্টে শুরুর দিকে নিজের কাছের লোক এবং স্টুডেন্টদের দিয়ে কমেন্ট করানো। যাতে মিনিমাম ২০টা কমেন্ট থাকে।
– বিভিন্ন গেস্ট ব্লগিং সাইটেও শিক্ষনীয় কনটেন্টের পোস্টের অজুহাতে ব্রান্ডটি প্রচার করা।
– বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষনীয় নোট শেয়ার, কিংবা টিপস শেয়ারের অজুহাতে ব্রান্ডের নাম প্রচার।
– বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে নিজেদের ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে শুভেচ্ছা ইমেজ প্রচার।
– পরিচিতদের এবং পেজের মেম্বারদের নিজেদের লোগো ইউজ করে ইমেজ বানিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো।
– পেজের ভিতরেও পেজের মেম্বারদের জন্মদিনে কিংবা বিশেষ অর্জনে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানানো।
– বিভিন্ন ফেসবুকে জনপ্রিয় ব্যক্তির বিশেষ কোন পোস্টকে কোটেশন আকারে পোস্ট (সম্ভব হলে ইমেজ পোস্ট) করে, সেই পোস্টে সেই বিশেষ ব্যক্তিকে ট্যাগ করে পোস্ট করা যায়। তাতে এ প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডটি সেই ফেসবুক সেলিব্রেটির নজরে চলে আসবে।
এ পরামর্শ অনুসরণ করে ১৫দিন পরই পেজের এবং আপনার ব্রান্ডের ভ্যাল ক্রিয়েট হবে। যা ১ম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম, অনলাইনে ভ্যালু ক্রিয়েট করতে হয়। ভাল ভ্যালু ক্রিয়েট হলে ভাল কনভার্সন হবে,, ভাল কনভার্সন হলে সেলও শুরু হবে। তখনই পেজের স্বাস্থ্যের অবস্থান বা ব্রান্ডিং অবস্থানও বুঝতে পারবেন। তখন থেকেই বিজনেস সম্পর্কিত পোস্টগুলো দেয়া শুরু করতে পারেন। তখন কিছু সেলও আশা করতে পারবেন। আরও অনেক টিপস দিয়ে বিষয়টিকে জটিল করতে চাইনি। আপনার যেকোন প্রোডাক্ট কিংব সার্ভিস যা অনলাইনে প্রোমোট করেন, সব কিছুর ক্ষেত্রেই একই পরামর্শগুলো অনুসরণ করবেন। আর এটাই হচ্ছে অনলাইন মার্কেটিংয়ের দক্ষতা। কাজে নামলেই প্রতি মুহুর্তে দক্ষতাগুলো বাড়বে। কাজে না নামলে এই কাজ চাইলেই আপনি কখনও করতে পারবেননা।
মনে রাখবেন , এখানে কেস স্টাডি হিসেবে একটা ট্রেনিং সেন্টারের বিজনেসকে নিয়ে লিখেছি। যেকোন বিজনেসের মার্কেটিংয়ের জন্য একই বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং এটাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিজেদের বিজনেসের পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। পরের পর্বে নতুন আরো কিছু পাবেন। এ পর্বটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে অবশ্যই জানাবেন এবং শেয়ার করবেন। তাহলে নতুন পর্ব লেখার ব্যাপারে উৎসাহ পাবো।
আমার সাথে যোগাযোগ: https://www.facebook.com/ekram07/