জেনেসিসব্লগসের অ্যাডমিন, মোঃ ইকরাম ভাইয়ের সম্পূর্ন অজানা গল্প
মোঃ ইকরাম- ক্রিয়েটিভ আইটি লিঃ-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার। এডমিন হিসেবে পরিচালনা করছেন জেনেসিস ব্লগস (genesisblogs.com)- অনলাইন আয়, ফ্রিল্যান্সিংসহ নানান বিষয়ে নিয়মিত লেখা প্রকাশ হচ্ছে এখানে। পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি বিষয় নিয়ে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু পেশা-নেশা সবকিছু এখন টেকনোলজিকে কেন্দ্র করেই। ভালো লাগে নতুন কাউকে সহযোগিতা করতে। তাইতো ক্রিয়েটিভ আইটির ব্যানারে হাজারো তরুন-তরুণীকে স্বপ্নবাজ করে তুলেছেন, স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছেন, করছেন এবং করবেন বলেও দৃঢ়প্রত্যয়ী। জড়িত আছেন সরকারী প্রজেক্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে। দেশব্যাপী বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন নিজের পরোপকারী মনটির জন্যই।অবসর সময় খুব একটা না পেলেও কাজের ভেতর থেকে যতটুকু উদ্ধার করতে পারেন, পরিবারের সান্নিধ্যে কাটানোর চেষ্টা করেন। কাজ নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যস্ততা থাকায় আড্ডা খুব একটা দেয়া হয় না। বিনোদন বলতে পছন্দের গান শোনাটাকেই প্রাধান্য দেন বেশি। এমনকি কাজের মুহূর্তটুকুতেও গান না শুনলে কাজে মন বসানো দ্বায় হয়ে পড়ে। সবসময় হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত থাকেন এই পরোপকারী মানুষটি।
অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়মিত এ ব্লগে প্রকাশ করা হয়। আমার খুব ইচ্ছা উনার ব্যাপারে জানার জন্য। সেজন্য উনার সাক্ষাৎকার নেই আমি। আজকে (২৫জুন) উনার জন্মদিনে সেই সাক্ষাৎকারটি উনার ব্লগেই পাবলিশ করছি। অনেকে উনার ব্যপারে অনেক অজানা অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং বিষয়গুলো অনেক শিক্ষনীয় অবশ্যই। উনার জন্মদিনের সারপ্রাইজ গিফট দিলাম। উনাকে না জানিয়ে উনার সাক্ষাৎকার উনার ব্লগেই প্রকাশ করলাম। “ হ্যাপী বার্থ দে” ইকরাম ভাইয়া।
১.আপনার আজকের এ সাফল্যের পিছনের গল্প কি ?
ইকরাম: আমার জীবনের অত্যন্ত সিক্রেট কিছু ট্রাজিডি আছে। যে গল্প আমি কাউকেই কখনও জানায়নি। এখনও জানাবোনা। আরও অনেক পরে এ বিষয় নিয়ে সবার কাছে জানাবো। ২০০১-২০০৫ পযন্ত আমাকে জীবনে অনেক বড় বিপদের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। যেটাতে এতবেশি নিজের জীবন নিয়ে আপসেট হয়ে পড়েছিলাম যে সুইসাইডও করতে চেয়েছিলাম। সেই সময়টা আমার আম্মু আমার পাশে ছিল শুধুমাত্র। আর সবাই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। কোনভাবেই নিজেকে ঠিক করতে পারছিলাম না। একটা পযায়ে শুধুমাত্র আমার আম্মুর কথা মাথাতে রেখে নিজেকে গুছানো শুরু করি। মনে আছে, তখন আমি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দেই। ভাবছিলাম যত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করব, ততই হতাশ হব। বর্তমানকে নিয়ে ভেবে আগাব। বর্তমানকে সুন্দরভাবে গড়তে পারলে ভবিষ্যৎ অবশ্যই সুন্দর হবে। সেই অনুযায়ি শুরু করি, নতুনভাবে নিজেকে গড়া। একটা জাতীয় পযায়ের শিশু সংগঠনের সাথে সংগঠক হিসেবে যুক্ত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলি। তখন প্রথমে থানা সভাপতি এবং পরে ঢাকা মহানগরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিখতে পারি অনেক কিছু। জীবনের কষ্টগুলো ভুলা শুরু করি তখন থেকেই। এটি ২০০৪ সালের ঘটনা। নিজের উপর কনফিডেন্ট আবার অল্প অল্প করে তখন ফিরতে শুরু করে। পুরো ঢাকাজুড়ে তখন শিশু সংগঠকজুড়ে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করি। সরকারের ভিতর, বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি পযন্ত এ জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৬ সাল হতে শুরু হয়, অন্য অধ্যায়। আমার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এবং আইটিতে আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমার ছোটবেলার বন্ধু তার সফটওয়্যার ফার্মের ব্যবসাতে আমাকে যুক্ত করে। তখন সে প্রতিষ্ঠানকে খুব ছোট থেকে মাত্র ৬মাসে ভাল একটা অবস্থানে নিয়ে আছি। কিন্তু ১বছর শেষ হতে না হতেই, আমার পার্টনার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড, ব্যবসাতে আমার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে হিংসা শুরু করে। যা থেকে মনমালিন্য হয়ে সেই ব্যবসা থেকে আমি সরে দাড়াই। তখন সেই মেয়েটি আমাকে অপমান করে এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। সেই চ্যালেঞ্জ আমাকে বড় কিছু করার জন্য মনের ভিতর জেদ তৈরি করে দেয়।
শুরু হয় জীবনের নতুন আরেকটি অধ্যায়। সেই মেয়ের চ্যালেঞ্জে জন্যই তখনেই শুরু করি আইটিতে নিজেকে দক্ষ করে তুলার মিশন। তখন এ দুনিয়া থেকে মোটামুটি ২বছরের জন্য গায়েব হয়ে যাই। আমার সেলফোন নাম্বারও পরিবর্তন করে ফেলি। আমার বাসার মানুষ, আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এলাকাবাসী সবার কাছ থেকেই আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে যাই। নিজেকে অনেক বড় অবস্থানে নিয়ে গিয়ে আবার নতুন পরিচয়ে সবার সামনে আসার পরিকল্পনা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করি। এর আগে আমি শুধু হার্ডওয়্যার কাজে দক্ষ ছিলাম এবং সেই লাইনে প্রচুর কাজ করতাম। তখন সেই চ্যালেঞ্জে নেমে গ্রাফিক ডিজাইন, তারপর ২ডি অ্যানিমিশন শিখা শেষ করি। এরপর শুরু করি ওয়েবডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট শিখা। সবকিছুই কোন মানুষের বিন্দু পরিমান সাহায্য ছাড়াই শিখি। ইংরেজী বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ব্লগই একমাত্র ভরসা ছিল। বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করি তখন থেকেই। প্রথমে লোকাল ক্লায়েন্টের কাজের মাধ্যমে কাজ শুরু করি। ওয়েবের কাজ করতে করতেই এসইও বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করি। তারপর ধীরে ধীরে কখন যে এসইও বিষয়ে কাজ শুরু করেছি বলতে পারব না।
২.সেই সময়টির নিয়ে কিছু বলুন যে সময়টি তে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছিল?
ইকরাম: উপরের প্রশ্নেই এ উত্তরটি দিয়ে ফেলেছি। অল্প কিছু তারপরও এ প্রশ্নের উত্তরে যোগ করছি।
আমি যখন নিজেকে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করি, তখন নিজেকে সকল সুখের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পরিকল্পনা করি। আমি আমার পরিবার নিয়েই জন্ম থেকেই ঢাকাতে থাকি। এবং আমার পরিবার যথেষ্ট স্বচ্ছল হওয়া স্বত্ত্বেও আমার নিজেকে গড়ার মিশন শুরু হওয়া পর, আমি পরিবার থেকে দূরে গিয়ে উত্তরা খিলক্ষেতের সেখানে গিয়ে থাকা শুরু করি। বাসা থেকে ইচ্ছা করে টাকা না নিয়ে নিজে আয় করে সেই টাকা দিয়েই খাওয়া দাওয়া শুরু করি। তখন নিজেকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সারাদিনে শুধুমাত্র পাউরুটি আর কলা কিনে খেতাম। কারন এরচাইতে বেশি নিজের টাকা ছিলনা। তারপরও বাসা থেকে টাকা নিতাম না। বাসা থেকে টাকা নিলে নিজের মধ্যে শীতলতা চলে আসবে, এ ভয়েই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার পরও ইচ্ছা করে নিজেকে দুই বছর ধরে শাস্তি দিতে থাকি। সব বন্ধু, আত্নীয় এবং কাছের মানুষদের সাথে ২বছর ধরে কোন ধরনের সম্পর্ক না রাখাও আমার জন্য অনেক বড় শাস্তি ছিল। তখনই আমি সেই শিশু সংগঠন থেকেও হঠাৎ করে দূরে সরে যাই। সেই কষ্টের ফলভোগ করছি এখন। দুই বছর পর আমি সংগঠক ইকরাম হতে নতুন পরিচয় হিসেবে আইটি ইকরাম পরিচয় নিয়ে সবার সামনে ফিরে আসি।
অনেক ধরনের বিপদে পড়েছি তখন। অনেকে ঠকিয়েছেও আমাকে। কিন্তু কোনটাতেই আমি কোন ধরনের আফসোস না করে, সেটাকে জীবনের জন্য শিক্ষা হিসেবে ধরে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাই।
পরিশ্রমের একটা উদাহরণ দিতে চাই। প্রতিদিন রাত ১০টাতে কম্পিউটারে বসে কাজ শুরু করতাম। সকাল ৯টাতে ঘুমাতে যেতাম। এরমধ্যে দিয়ে একবারের জন্য যাতে উঠতে না হয়, সেজন্য পানির বোতল নিয়ে বসতাম। এ অবস্থাতে চলতে গিয়ে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। ৩মাস তখন বেড রেস্টে চলে যেতে হয়েছে। সেই সময় ঘরের মধ্যেও ২জনের কাধে ভর করে চলতে হয়েছে কয়েকদিন।
৩.আপনার আজকের এই সাফল্যের পিছনে কার অবদানটি সবচেয়ে বেশি?
ইকরাম: সবার ১ম বলব আমার আম্মুর কথা। আমার কঠিন মুহুর্তে একমাত্র আম্মু আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিত। বলতেন, সবকিছু আল্লাহর পরীক্ষা। দেখবি একদিন তোকে নিয়ে মানুষ গর্ব করবে। সেইভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা শুরু কর।
আরেকজন, আমার সমবয়সী মামাতো ভাই সুজন। সে সবসময় আমাকে অনেক বেশি মেনটার্লি সাপোর্ট দিয়েছিল। আমাকে শিখতে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সে নিজেও পাশে থেকে শিখেছে। আমাকে কেউ কখনও মেনটার্লি সাপোর্ট কিংবা উৎসাহ দেয়না। একমাত্র সেই সুজন সবসময় আমাকে অনেক সাপোর্টি দিয়ে গেছে।
৪.আপনার কাছে সাফল্যের অর্থ কি বলে মনে হয়?
ইকরাম: জীবনের অনেক চড়াই উৎড়াই পার হয়ে এসে নিজের উপলব্ধি থেকে বুঝেছি, কেউ যদি মনে করে জীবনে অনেক টাকা হলে কিংবা অনেক বেতনের চাকুরি হলেই জীবনে সফলতা অর্জন করেছেন, তাহলে এ ভাবনা আপনাকে সুখী করতে পারবেনা। বরং আপনার হাতে যে কাজ রয়েছে সেটিকে ভালভাবে সম্পন্ন করে তার বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে বাহবা পাওয়াটাই সাফল্য। এমনকি হতে পারে সেই কাজে কোন টাকা আয় হয়নি, উল্টো নিজের পকেট থেকেই টাকা খরচ হয়েছে। যেকোন কাজ সম্পন্ন হয়ে বাহবা পাওয়াটাই সবচাইতে বড় সফলতা। এ মন্ত্র নিয়ে এগোতে পারলে সুন্দর ভবিষ্যতও গড়তে পারবেন , আবার নিজে অবশ্যই সুখীও হবেন।
৫. আপনাদের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশংসার পাশাপাশি বদনাম ও শোনা যায়, বিষয়টি নিয়ে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই।
ইকরাম: একটা বড় ব্রান্ড হয়ে গেলে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আপনার হালকা দুর্বলতা নিয়েও অনেক বেশি আলোচনা হবে। এটিকে খুব স্বাভাবিক হিসেবেই দেখি। তবে দুর্বলতাগুলো জেনে আমরা এড়িয়ে যাইনা। সেগুলোকে অবশ্যই পরিবর্তন করে নিজেকে আরও আপডেট করার চেষ্টাতে থাকি। তবে বেশিরভাগ সময় যেটা ঘটে, অনেকে নিজেরা সবকিছু না জেনেই দূর থেকেই ধারণা করেই অনেক কিছু প্রচার করে। আবার একই রকম অনেক প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটির জনপ্রিয়তাকে তাদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মনে করে। আর সেজন্য বাকা পথে কমিউনিটিতে ক্রিয়েটিভ আইটির সুনাম নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কৌশলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অর্জনগুলো সকল অপপ্রচারের জবাব হিসেবে কাজ করে বলে মনে করি। বিবেকবানদের জন্য আমাদের অর্জনগুলোই যথেষ্ট।
৬.নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ইকরাম: নতুনদের জন্য বলব, ফ্রিল্যান্সিংটাকে শুধুমাত্র টাকা ইনকামের জায়গা মনে না করে এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। আর কখনও শর্টকার্ট উপায়ে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করলে হতাশ হতেই হবে। ৫বছর থেকে যদি সুখে থাকতে চান, তাহলে এখনকার সুখকে বিসর্জন দিন। পরিশ্রম করুন প্রচুর। তাহলেই ৫বছর পর বিলাসিতা করার সুযোগ পাবেন। আর এখনের সময়টাতে যদি বিলাসিতা করেন, তাহলে ৫বছর পর হয়ত দেখবেন, আপনার সবচাইতে কাছের বন্ধুটি পাশ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আর আপনাকে গাড়িতে ঝুলে ঝুলেই সারাজীবন যাতায়াত করতে হবে। তখন লজ্জার কারনে হয়ত সেই বন্ধুর সামনেই যেতে পারবেন না। সেই দিনের কথা চিন্তা করে এখনের সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।
৭.আপনার ভালোলাগার বিষয়গুলো?
ইকরাম: উচ্চ ভলিউমে গান শুনতেই বেশি ভালবাসি। আমার সাথে অফিসে দেখা করতে আসলেই দেখবেন, সবসময় কানে হেডফোন থাকে। কাজ করার সময় কানে গান না বাজলে ভাল কাজ বের হয়না। ঘুরতেও পছন্দ করি।
৮.স্বপ্ন, স্বপ্নের বাস্তবতা নিয়ে কিছু বলুন?
ইকরাম: এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেকের সফলতার গল্পগুলো পড়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। ইশ,আমিও যদি মাসে অনলাইন হতে ৫০,০০০টাকা আয় করতে পারতাম, তাহলে দামি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম। স্বপ্ন সত্যি করার জন্য আল্লাহর কাছে মানত করে অনলাইনে সফল হতে পারলে প্রতি মাসে ১০০০টাকা করে মসজিদে দান করবে। কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ না। স্বপ্নটা দেখা উচিত এরকম। ইশ আমি যদি অন্যদের মত ১৮ঘন্টা-২০ঘন্টা পরিশ্রম করতে পারতাম। মাত্র ২-৩ ঘন্টা ঘুমিয়েও যদি চলতে পারতাম। আমার ধৈয্য শক্তিও যদি অন্যদের মত হত। এস্বপ্নটি দেখতে পারলে সেই অনুযায়ি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে স্বপ্নের রাজদরবারে পৌছানো বাস্তবে সম্ভব হবে।
৯.স্কুল/কলেজে /বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় কোন ঘটনা কি খুব বেশি মনে পড়ে?
ইকরাম: আমি আসলে পিছন দিকে কখনও ফিরে তাকাইনা। সামনেই শুধু এগিয়ে যাই। অতীত আমাকে টানেনা। তারপরও যদি মনে পড়ে কিছু ঘটনা। আমরা ৩বন্ধু সবসময় একসাথে ক্লাশে বসতাম। ক্লাশে টিচারকে ফাকি দিয়ে সারাদিন খাতার মধ্যে ক্রিকেট খেলতাম। সেটিতে টুর্ণামেন্টও হত। আবার ক্লাশে টিচার না থাকলে কলম কলম খেলতাম। এগুলো মাঝে মাঝে মনে করে মিস করি সেই দিনগুলো।
১০.টেক জগতের বাইরে অবসর সময় টি কিভাবে উপভোগ করেন?
ইকরাম: আমি ফ্রি সময় পেলেই ঘুরতে বের হই। ২০ঘন্টাতে কক্সবাজার ঘুরে আসার রেকর্ডও আছে আমার। ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ না পেলে ঘরে ফুল সাউন্ড দিয়ে সাউন্ড বক্সে গান শুনতে অনেক ভাল লাগে।
১১. জীবন, সাফল্য এবং ব্যার্থতা এই তিনটি বিষয়তো একই সুত্রে গাঁথা , আপনার কাছ এই তিনটি বিষয় কি মানে হয়?
ইকরাম: আমি আসলে কোন কিছুতে ব্যর্থ হলে সেটি নিয়ে আফসোস করিনা। এটাকে জীবনে একটি অংশই মনে করি। জীবনে ব্যর্থতা না থাকলে সফলতার কোন মজা নাই। প্রতিটা ব্যর্থতা আপনাকে যে শিক্ষা দিতে পারবে, সেটা কোন ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং দিয়েও কেউ পারবেনা।
১২. আমরা জানি আপনি সবার জন্য সবসময় কিছু করার চেষ্টা করেন। এ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলবেন।
ইকরাম: নিজে অনেক বড় সারভাইভ করে নিজের জীবনকে গড়েছি। হতাশার কারনে নিজের জীবনটাকেও ধ্বংস করে দিতে নিয়েছিলাম। আমার অবস্থান হতে এ জায়গাতে আসা, আমার পরিচিত যারা ঘটনা জানে তাদের কাছে অবিশ্বাস্য ব্যপার ছিল। নিজে বুঝি হতাশার বিষয়টি। সেজন্য মানুষকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টাটাই বেশি করি। কনফিডেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করি। বরাবরই আমার টাকার নেশাটা অনেক কম। মানুষেল ভালবাসা আর দোয়াটাই আমার কাছে প্রাধান্য পায়। সেজন্য মানুষের জন্যই চেষ্টা করি অনেক কিছু করার।
– প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০জনকে বিভিন্ন সোশ্যালমিডিয়াতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাপোর্ট দেই। এমনকি আমার নিজের বিয়ের ১০মিনিট আগেও আমি একজনকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম ফেসবুকে।
– সবার প্রিয় জেনেসিসব্লগসটিও মানুষের উপকারের জন্যিই করা। অনেক ধরনের বিজ্ঞাপনের অফার পাওয়ার পরও বিজ্ঞাপন নিচ্ছিনা। এটা শুধু মাত্র মানুষের উপকারের জন্যই ব্যবহার করতে চাই। হয়ত ভবিষ্যতে নিজের কোন ব্যবসার প্রমোট করতে পারি। কিন্তু কারও বিজ্ঞাপন এখানে না ব্যবহার করার পরিকল্পনা এখন পযন্ত। সবাইকে গাইড দেওয়ার জন্য এ ব্লগটি চালাতে গিয়ে প্রতিদিন আমাকে ৬-৭ ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। আর এ ব্লগটি চালাচ্ছি আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ, আনলিমিটেড স্পেসের সার্ভারে। এধরনের সার্ভারের খরচ কিরকম হতে পারে সেটি অনেকের হয়ত জানা আছে। সব করছি, মানুষের জন্যই।
আল্লাহ আমাকে আরও ক্ষমতা দিলে আরও অনেক কিছুই করতাম। মানুষের জন্য এত কিছু করতে গিয়ে অন্যদের মত হয়ত প্রচুর টাকার মালিক হতে পারিনাই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আফসোস নাই।
তবে সামনের দিনগুলোতে হয়ত এ সেবা কিছুটা কমিয়ে দিব।
১৩. সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাইলে এখানে বলতে পারেন।
ইকরাম: অন্যদের দোষ খুজে বের করার অভ্যাসটি ত্যাগ করা উচিত। এমন হতে পারে, আপনি যা ভাবছেন অন্যের ব্যাপারে কিন্তু প্রকৃত ঘটনা সেরকম কিছুইনা। কিংবা অন্য কেউ যদি আপনাকে একই রকমভাবে ভুল বুঝে, সেটি নিশ্চয়ই খুব খারাপ লাগে। আপনি হয়ত তখন বুঝেন, অন্যে আপনাকে নিয়ে যা ভাবছে সেটি ভুল। একই রকম ভুল আপনি নিজেও অন্যের ব্যাপারে করছেন কিনা ভেবে দেখুন।
কারও খারাপ দিকটি নিয়ে প্রচার করার আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুনতো, তার কোন ভাল দিক নিয়ে কখনও প্রচার করেছেন কিনা? যদি তার ভাল দিককে প্রচার করতে না পারেন, তাহলে তার খারাপ দিকটা নিয়ে প্রচার করার ব্যাপারে আপনার উৎসাহটি কি আপনাকে সৎ মানুষ হিসেবে পরিচয় তৈরি করে কিংবা এ বিষয়টি কি আল্লাহ মেনে নিবে?
মানুষের এ বিষয়গুলো সমাজের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি করে। মানুষের ভাল দিকগুলো খুজে বের করে প্রচার করুন। খারাপ দিকগুলো ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দিন ঠিক করার জন্য।